বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশটির একটি বিতর্কিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলে বর্ণনা করেছেন।
বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের কাছাকাছি রামপালের এই প্রকল্পটিকে বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে বিএনপির তরফ থেকে কোনো ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়নি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশ,অর্থনীতি এবং সর্বোপরি সুন্দরবনের উপর কতটা পড়তে পারে, তার একটা চিত্র তুলে ধরেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
তিনি যেমন উল্লেখ করেছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বছরে ৪৭ লাখ টনের বেশি কয়লা পোড়ানো হবে। পোড়ানোর পাশাপাশি কয়লা আনা নেয়াতেও সুন্দরবনসহ পুরো ঐ অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় অংকের ঋণের ৭০ শতাংশই বাংলাদেশকে শোধ করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
এই প্রকল্পের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেছেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে, তা উপেক্ষা করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার দেশের স্বার্থবিরোধী এবং গণবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে।’’
ভারতের মধ্যপ্রদেশে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব যে বাতিল করা হয়েছে, বিএনপি নেত্রী যুক্তি হিসেবে সে প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন নামে যে কোম্পানি বাংলাদেশের পিডিবি’র সাথে যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে, ভারতের সেই একই কোম্পানি তাদের মধ্যপ্রদেশে তা করতে পারেনি।
তারা নিজের দেশে তা করতে না পেরে ‘শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে’ বাংলাদেশে তা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে বামপন্থী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সমমনাদের একটি ফোরাম তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ।
এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে চুক্তি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ইস্যুতে আন্দোলন একটা মাত্রা পেয়েছে ও এ ব্যাপারে জনমতও তৈরি হচ্ছে।
সেখানে বিএনপি যে দীর্ঘ সময় ধরে একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপি রামপাল ইস্যূকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর দেশটির সুদৃষ্টি পাওয়ার জন্য বিএনপির অনেক কর্মকান্ড ছিল চোখ পড়ার মতো।
ফলে লম্বা সময় বিএনপি ভারত সাথে কোনো ইস্যু নিয়ে সেভাবে বক্তব্য দেয়নি।এখন আবার বিএনপি ভারতের সাথে কোন ইস্যূ নিয়ে বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরলো।
খালেদা জিয়ার বক্তব্যে অভিন্ন নদীর উজানে ভারতের পক্ষ থেকে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রসঙ্গও এসেছে।
যদিও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু এই প্রথম বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করা হলো।